“জয়িতা” এখানে বিজয়ী নারীর প্রতিকী নাম। জয়িতা উদ্যোগের প্রণেতাগণ বিশেষ করে ব্যবসা ক্ষেত্রে নারীর বিজয়ের স্বপ্ন দেখেন। সে বিবেচনায় নারীমুক্তির একটি মহৎ স্বপ্নের নামও জয়িতা। যার প্রতিফলন জয়িতা ফাউন্ডেশনের লোগোতে লক্ষ্যনীয়। বিগত ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে সরকারের অর্থায়নে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ‘‘জয়িতা’’ শীর্ষক একটি কর্মসূচি পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন শুরু করে। কর্মসূচিটির মেয়াদ ছিল তিন বছর। কর্মসূচি শুরুর অব্যবহিত পরেই ‘জয়িতা’ কেন্দ্রীক নারীমুক্তির স্বপ্নটিকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর “জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ” নামে একটি অভিনব কার্যক্রমের সূচনা করে। ফলশ্রুতিতে জয়িতার পরিচিতি যেমন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পরে, তেমনি জয়িতাকে কেন্দ্র করে দেশের নারীসমাজের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও আশাবাদ সঞ্চারিত হয়। প্রাথমিকভাবে ঢাকায় একটি নারীবান্ধব বিপণন পরিকাঠামো গড়ে তুলে তৃণমূলের নারী উদ্যোক্তাদেরকে (যাদের নিজস্ব উদ্যোগে তৈরী করা বিপণনযোগ্য পণ্য রয়েছে) পণ্য প্রদর্শন ও বিপণনের সুযোগ করে দেয়া হয়। কার্যক্রমটির ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য পরবর্তিতে “জয়িতা ফাউন্ডেশন” নামে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগী একটি অলাভজনক ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। জয়িতা ফাউন্ডেশন Societies Registration Act, XXI of 1860 Gi AvIZvq Joint Stock Companies and Firms কর্তৃক নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠান।
জয়িতা ফাউন্ডেশন নিজে ব্যবসা করে না, নারী উদ্যোক্তাগণ এখানে জয়িতা-র প্লাটফর্মে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসা করেন। জয়িতা ফাউন্ডেশন পরিকাঠামোগত সুবিধাদিসহ নারী উদ্যোক্তাদেরকে ব্যবসা পরিচালনায় ও পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জ্ঞান-দক্ষতা প্রদান করে। ক্ষেত্রবিশেষে পুঁজি যোগানের ক্ষেত্রে ঋণ সহায়তা প্রদান করে। জয়িতা-র ব্র্যান্ড ভ্যালু সৃষ্টির লক্ষ্যে বিপণনযোগ্য পণ্য/সেবার মান নিয়ন্ত্রনসহ প্রচার প্রসারে জয়িতা ফাউন্ডেশন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে। কোন ব্যক্তি নারী উদ্যোক্তা নয়; সমিতিতে সংগঠিত নারী উদ্যোক্তাগণ উৎপাদিত পণ্য এক ছাদের নীচে সমিতিভিত্তিক আলাদা আলাদা ষ্টলে জয়িতা-র ব্র্যান্ডে বাজারজাত করে। জয়িতা ফাউন্ডেশন ব্যবসা অনুকূল ও নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করে। নারী উদ্যোক্তা সমিতির সদস্যগণ ব্যবসায় অর্জিত মুনাফা স্ব স্ব অবদান অনুসারে প্রাপ্য হন। অন্যান্য প্রতিযোগীদের উপস্থিতিতে একটি বাজার ব্যবস্থায় নারী উদ্যোক্তাগণ তাদের ব্যবসার সবল-দূর্বল দিক এবং সমস্যা-সম্ভাবনার দিকগুলি অনুধাবন করে তাদের ব্যবসা কার্যকরভাবে পরিচালনায় প্রয়াসী হবেন মর্মে জয়িতা ফাউন্ডেশন আশা করে। নারী উদ্যোক্তাগণ সহায়তার ক্ষেত্রগুলি এ প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে সমর্থ হবেন, তদনুসারে উদ্যোক্তাদের চাহিদার নিরিখে জয়িতা ফাউন্ডেশন সে সমস্ত সহায়তা কার্যকর ও সাশ্রয়ী মূল্যে প্রদানে উদ্যোগী হবে। বাজার চাহিদার নিরিখে জয়িতা ফাউন্ডেশন নতুন নতুন ব্যবসার ক্ষেত্র উদ্ভাবন ও উদ্ভাবিত ব্যবসাসমূহে নারীদেরকে সম্পৃক্ত করতে নিরন্তর সচেষ্ট থাকে। আশা করা যায়, এমনিভাবে নারীবান্ধব ব্যবসায় অনুকূল পরিবেশে ব্যবসা করতে করতে কালক্রমে নারী উদ্যোক্তা সমিতিগুলি গড়ে উঠবে। ফলশ্রুতিতে সমিতির সদস্য হিসাবে নারীদের সম্মানজনক জীবিকায়নের ব্যবস্থা হবে। এ প্রক্রিয়ায় দেশের নারীসমাজের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হবে। নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী সফল নারী উদ্যোক্তা গড়ে তুলে তাদের মাধ্যমে একটি আলাদা বাজার ব্যবস্থা (বিপণন নেটওর্য়াক) ও ভ্যালু চেইন (সাপ্লাই চেইন) গড়ে তোলা জয়িতা ফাউন্ডেশনের মূল উদ্দেশ্য। এ ধরনের বাস্তব নজির সৃষ্টি করে নারীদের ব্যবসায় সম্পৃক্ততা বিরোধী পিতৃতান্ত্রিক সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতা ক্রমান্বয়ে দুর করাও জয়িতা ফাউন্ডেশনের অন্যতম উদ্দেশ্য। এগুলো জয়িতা উদ্যোগের অনন্য বৈশিষ্ট।
ততকালিন প্রধানমন্ত্রী প্রজ্ঞাপ্রসূত স্বতঃস্ফুর্ত অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন যে, জয়িতাকে পর্যায়ক্রমে বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় সম্প্রসারিত করে সমগ্র দেশব্যাপী একটি নারীবান্ধব আলাদা বিপণন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবেন। জয়িতা ফাউন্ডেশন এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিশীল একটি প্রতিষ্ঠান। জয়িতা উদ্যোগের প্রণেতাগন মনে করেন, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীর সামগ্রীক ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া ত্বরাম্বিত করে লিঙ্গ সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের জন্য বাংলাদেশের সমাজ বাতাবরণের উপযোগী একটি অনন্য উদ্যোগ জয়িতা। দেশের সাংবিধানিক অঙ্গীকার হিসাবে লিঙ্গ সমতাভিত্তিক সমাজ নির্মাণের চলমান প্রক্রিয়ার পরিপূরক হিসাবে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নিরবিচ্ছিন্ন কর্মপ্রয়াস পরিচালনায় সক্ষম একটি কার্যকর বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসাবে জয়িতা ফাউন্ডেশনকে গড়ে তুলতে হবে।